Sunday, November 10, 2019

ভারতের অনভিজ্ঞ বোলিংয়েই আশা দেখছে বাংলাদেশ




ধেয়ে আসছে প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়, ঘোষণা করা হয়েছে উচ্চমাত্রার বিপত্সংকেত। এ রকম একটা সময়, দেশ থেকে কয়েক হাজার কিলোমিটার দূরে, রীতিমতো উপভোগ্য আবহাওয়াও ঠিক স্বস্তি দিতে পারছে না। সম্ভাব্য ধ্বংসলীলার আশঙ্কা দেশের উপকূলজুড়ে। অন্যদিকে নাগপুরে বাংলাদেশ দলে চলছে রোহিত-আতঙ্ক। নাগপুরেই জন্ম নেওয়া এই ব্যাটসম্যানের ধ্বংসযজ্ঞে কী হয়, সেটা অনেক দিন ধরেই টের পাচ্ছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। তাঁকে থামানোর চেষ্টা বা চিন্তা আপাতত বাদ, কারণ ওসব করেও কোনো লাভ হয়নি এত দিন। এর চেয়ে বাংলাদেশ দলের থিংকট্যাংক খুঁজছে প্রতিপক্ষের দুর্বলতা। ভারতের বোলিং লাইনআপটা তুলনামূলকভাবে নতুন। সিরিজ নিষপত্তির ম্যাচে, তরুণ বোলারদের ভুলের গোলমালে যদি একটা কিছু করা যায়, তাহলেই হয়তো ধরা দেবে প্রত্যাশিত সাফল্য। তবে বাস্তবতার নিরিখে, ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের দিক পরিবর্তন করে অন্যদিকে চলে যাওয়া আর বাংলাদেশের তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে জিতে সিরিজ জেতার সম্ভাবনার খুব একটা তফাত নেই।
নাগপুরের মাঠ আকার-আয়তনে রাজকোটের মতোই। উইকেটের চরিত্র দিল্লি আর রাজকোটের মাঝামাঝি। দক্ষিণ আফ্রিকার কোচ হিসেবে নাগপুরে খেলতে আসার স্মৃতি থেকে বাংলাদেশের কোচ রাসেল ডমিঙ্গো মনে করলেন, ‘শেষবার যখন নাগপুরে এসেছিলাম, তখন তো দুই দিনে খেলা শেষ হয়ে গিয়েছিল। এবার তো অবস্থা কিছুটা ভালো মনে হচ্ছে। আমার মনে হয়, প্রথাগতভাবে নাগপুরে রাজকোটের চেয়ে কম রান হয়ে আসছে। রাজকোটের গড় ইনিংস রান যদি ১৮০-১৮৫ হয় তাহলে নাগপুরে সেটা ১৫৫। আমার মনে হয় এখানে রাজকোটের চেয়ে স্পিনারদের আরো বড় ভূমিকা নিতে হবে।’ ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মা কাল পিচ না দেখলেও এখানকার উইকেট সম্পর্কে ধারণা থেকেই বললেন, ‘আমি এখনো উইকেট দেখিনি, তবে সাধারণত নাগপুরের উইকেট ক্রিকেট খেলার জন্য খুবই ভালো। এই উইকেট থেকে বোলাররাও সাহায্য পাবে, যদি তারা সঠিক লাইনে বল করে। এমনকি রাজকোটের উইকেটেও কিন্তু বোলারদের জন্য কিছু না কিছু ছিল। আমাদের ভালো মানের স্পিনাররা আছে, যারা মাঝের ওভারগুলোতে রান আটকাতে আর উইকেট নিতে পারে। বোলারের যদি ঝুলিতে বৈচিত্র আর দক্ষতা থাকে, তাহলে উইকেট কোনো ব্যপার না।’
ভারতের বোলিং লাইনআপে নেই জসপ্রিত বুমরাহ, মোহাম্মদ সামির মতো শীর্ষস্থানীয় বোলাররা। রোহিত ব্যাপারটা মেনে নিয়েই এটাকে দেখছেন তরুণদের জন্য দারুণ একটা সুযোগ হিসেবে, ‘ওরা একটু অনভিজ্ঞ, তবে শেখার এটাই সঠিক জায়গা। সব সময় বলা হয় ঘরোয়া ক্রিকেট খেলে তৈরি হতে, তবে যতক্ষণ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কেউ না খেলে, সে বুঝতে পারবে না ফারাকটা আসলে কতখানি। আন্তর্জাতিক ম্যাচে না খেললে বোলার হিসেবে অবস্থান পরিষ্কার হবে না; কারণ আন্তর্জাতিক ম্যাচে একজনকে ধারাবাহিকভাবে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়। কেউ চট করে সাফল্য পায় না। এটাও একটা শিক্ষা যে ম্যাচ খেলতে খেলতেই একজন ভালো খেলোয়াড় হয়ে ওঠে। এ দলটাকেই এক-দুই বছর দিলে তারা ভালো খেলোয়াড় হয়ে উঠবে।’ বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণে অবশ্য অভিজ্ঞতা আছে, সাফল্য নেই। শফিউল ইসলাম, আরাফাত সানি আর আল আমিন হোসেন, তিনজনেরই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক বেশ কয়েক বছর আগে। একমাত্র নতুন খেলোয়াড় আমিনুল ইসলাম বিপ্লব, যাঁর সাফল্য থাকলেও নেই বড় ম্যাচের অভিজ্ঞতা। রাজকোটে নিরীহ বলেই রোহিতের উইকেটটা পেয়েছেন আমিনুল, তবে বড্ড দেরিতে। রোহিতকে থামাতে হয়তো আজও আমিনুলই ভরসা, ‘আমি সব সময় একজন লেগস্পিনার চেয়ে আসছি আর সে যতটা না ব্যাটসম্যান এর চেয়ে বেশি লেগস্পিনার। তবে আমি ওর উৎসাহ, প্রাণশক্তি আর সাহস দেখে মুগ্ধ। আগের ম্যাচে রোহিতের অমন ব্যাটিংয়ের সামনেও সে ৩.৫ ওভারে ২৩ রানে ২ উইকেট নিয়েছিল, এরপরই শেষ বলে সে একটা ছয় হজম করে। সে খুবই ভালো বোলিং করেছে।’ ভারতীয় বোলারদের নামের পাশে আন্তর্জাতিক ম্যাচের সংখ্যা কম হলেও আইপিএল ম্যাচের সংখ্যাগুলো ভারী। তাঁদেরও রোহিতের কাছে মনে হচ্ছে অনভিজ্ঞ, সেখানে মাত্র তিনটি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি খেলা আমিনুলের ওপরই আস্থা ডমিঙ্গোর।
শেষ ম্যাচে যা-ই হোক, সিরিজের শেষ ম্যাচটা হতে যাচ্ছে নিষপত্তির; এতটুকুতেই আসলে সন্তুষ্ট ডমিঙ্গো, ‘বাংলাদেশের ক্রিকেটের যে টালমাটাল একটা সপ্তাহ বা ১০টা দিন গেছে, এরপর আমাকে কেউ যদি বলত যে আমরা এই সিরিজে একটা ম্যাচ জিতব এবং নাগপুরে ম্যাচটা হবে অলিখিত ফাইনাল, তাতেই আমি খুশি হয়ে যেতাম। তখন এ কথাটা বললে কেউই বিশ্বাস করত না। ভারত বিশ্বের সেরা দলগুলোর একটা, কেউ বাংলাদেশের কোনো সুযোগ দেখছে না। তবে আমরা যদি আমাদের সামর্থ্য দিয়ে খেলতে পারি, তাহলে আমাদের পক্ষেও জেতা সম্ভব।’ দলে কোনো পরিবর্তনের আভাসও নেই ডমিঙ্গোর কণ্ঠে, এমনকি মুস্তাফিজুর রহমানের বাজে ফর্মের ধারাবাহিকতা সত্ত্বেও, ‘সে খুব ভালো বোলার, ম্যাচ উইনার, আমাদের সেরা বোলার। আমরা জানি যেকোনো দিন সে ভালো করবে। বোলাররা আসলে এই ফরম্যাটের ক্রিকেটে (টি-টোয়েন্টি) এমনিতেই খুব চাপে থাকে। তার ওপর শিশির ভেজা বলে ভালো উইকেটে সেরা ব্যাটসম্যানদের বিপক্ষে বোলিং করা।’
দিল্লিতে বাংলাদেশ জিতেছে রান তাড়া করে, শেষ ওভারে এসে। রাজকোটেও পরে ব্যাট করে ভারত জিতেছে হেসেখেলে। এখানে টস তাই হতে পারে গুরুত্বপূর্ণ। এই মাঠে ভারতের শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২১৯ রান করারও নজির আছে, আবার নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৭৯ রানে গুটিয়ে যাওয়ার উদাহরণ রয়েছে। সেই ম্যাচে ১০ রানে ৪ উইকেট নিয়েছিলেন বাঁহাতি স্পিনার মিচেল স্যান্টনার। সে জন্যই হয়তো ডমিঙ্গো এখানে স্পিনেই বেশি ভরসা করছেন, ‘ভারতের ব্যাটিংয়ে টপ অর্ডারের ছয়জনের মধ্যে বেশ কয়েকজন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান আছে, তাদের বিপক্ষে আমাদের অফস্পিনটা কার্যকর হতে পারে, যে কৌশলটা এক ম্যাচ আগেই কাজ করেছে। স্রেফ আগের ম্যাচে কাজ করেনি বলে সেটা বাতিল হয়ে যেতে পারে না।’
বোলিং বিভাগের পরিকল্পনা মোটামুটি গুছিয়েই এনেছেন ডমিঙ্গো। চিন্তা শুধু ব্যাটিং নিয়ে, ‘প্রথম ম্যাচে মুশফিক ৬০ রান করেছে, আমরা জিতেছি। পরের ম্যাচে রোহিত ৮৫ রান করেছে, ওরা জিতেছে। আমাদের একজনকে ৬০-৭০ রানের ইনিংস খেলবে।’ কিন্তু বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধার মানুষটা যে কে হবেন, সেটাই যে রহস্য ডমিঙ্গোর কাছে। পাঁচ ওভারে ৫৪ করার পর যে দল পরের ১৫ ওভারে করে ১০০ রান, সেই দলের ব্যাটসম্যানদের নিয়ে পূর্বাভাস দেওয়াটা যে আসলে ঝড়ের পূর্বাভাস দেওয়ার চেয়েও কঠিন!

No comments:

Post a Comment