Saturday, November 16, 2019

টেস্ট দুর্বলতা কাটাতে না পারলে বাংলাদেশের দাম থাকবে না-মোহাম্মদ রফিক

১৯ বছরেও টেস্ট ক্রিকেট রপ্ত করতে পারেনি বাংলাদেশ। গড়ে ওঠেনি টেস্ট-সংস্কৃতি। ইন্দোরে ভারতের বিপক্ষে ইনিংস পরাজয়ে চরম হতাশ আইসিসি ট্রফি জয় এবং দেশের প্রথম টেস্ট জয়ের অন্যতম নায়ক মোহাম্মদ রফিক।
২০০৫ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে পাঁচ উইকেট ও ৮৩ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন জাতীয় দলের এ তারকা ক্রিকেটার।
দেশের অভিষেক টেস্টে খেলা কিংবদন্তি তুল্য এ স্পিনার যুগান্তরকে দেয়া সক্ষাৎকারে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন। তার একান্ত সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন স্পোর্টস রিপোর্টার আল-মামুন। সেই সাক্ষাৎকারের চুম্বক অংশ তুলে ধরা হল।
যুগান্তর: ভারতের মাঠে টি-টোয়েন্টি সিরিজে ভালো খেলার পরও ইন্দোর টেস্টে ইনিংস পরাজয় নিয়ে যদি বলেন?
মোহাম্মদ রফিক: এটা নিয়ে আর কী বলব? খেলা আপনিও দেখেছেন আমিও দেখেছি। সবচেয়ে ভালো আপনারাই বলতে পারবেন, যেহেতু আপনারা লেখালেখি করেন। তাছাড়া আপনারা ক্রিকেট ম্যাচগুলো কাভার করেন।
তবে প্লেয়ার হিসেবে যদি বলতে হয়, ইন্দোরের উইকেট অনুসারে যেরকম টিম হওয়ার কথা ছিল, সেরকম টিম সাজানো হয়নি। এত ভালো ভালো পেস বোলার থাকতে তাদের বসিয়ে রাখা হয়েছে। তাদের দিয়ে কী করা হবে? এর চেয়ে স্লো উইকেটে খেলানো হবে? এখানের উইকেট তো ছিল বাউন্সি। পেস বোলারদের জন্য আদর্শ। ইন্দোরে ভারতের ২০ উইকেট তুলে নিতে হলে যে মানের পেস বোলার দরকার ছিল তাদের নামানো হয়নি। আমরা উইকেট অনুসারে দল সাজাতে পারিনি। এই জায়গায় আমরা অনেক পিছিয়ে।
সবচেয়ে বড় কথা হল যে উইকেট ছিল টস জিতে ফিল্ডিং নিলে আরোও ভালো হতো। তাহলে অন্তত টেস্ট ম্যাচটা তিনদিনে শেষ হতো না।
যুগান্তর: ভারতের পরিচিত উইকেটে এভাবে ইনিংস পরাজয় কী আমাদের ব্যর্থতা?
মোহাম্মদ রফিক: ব্যর্থতা বলব না। আপনারা খেলা দেছেন। বাংলাদেশের ক্রিকেট কোথায় যাচ্ছে, সেটা নিয়ে আমাদের এখন থেকেই চিন্তা করা উচিত। আমরা তো এত খারাপ টিম না। ২০ বছর ধরে ক্রিকেট খেলছি, তাছাড়া ভারতীয় ক্রিকেটারদের সঙ্গে প্রতি বছরই দেখা (খেলা) হয়। এরকম না যে নতুন দল, এদের কাউকে চিনি না, জানি না। তাতো নয়। এদের সবাইকে আমরা চিনি। কারা কেমন ব্যাট আর বোলিং করে তাও ভালো করেই জানি। সবচেয়ে বড় কথা হল ইন্দোর টেস্টে ভারতের সঙ্গে প্রতিদ্বন্ধিতা করার মতো টিম সাজানো হয়নি।
যুগান্তর: জাতীয় দলের কোচ বলেছেন ভারতীয়দের মানের ব্যাটসম্যান আমাদের দলে নেই। এটা নিয়ে আপনি কি বলবেন?
মোহাম্মদ রফিক: না না, আমাদের বোলিং সাইটটাই দুর্বল। টেস্ট ম্যাচে বোলারদের কাজ করতে হবে। বোলাররা যদি ওদের অলআউট না করতে পারে, তাহলে ওদের ব্যাটসম্যান কি আমাদের ছেড়ে দেবে? ছাড়বে না। সবচেয়ে আগে একটাই চিন্তা করতে হবে ওদের অলআউট করতে হবে। এই টেস্টে উইকেট শিকারের মতো বোলার বাংলাদেশ দলে ছিল না।
যুগান্তর: ১৯ বছরে বাংলাদেশে টেস্টে প্রত্যাশিত পর্যায়ে না যাওয়ার পেছনে কী কী কারণ দেখছেন?
মোহাম্মদ রফিক: ২০ বছর হয়ে গেল, আর কবে উন্নতি হবে? আর কবে শিখব আমরা? এখন থেকে ১০ বছর আগেও আমরা এর চেয়ে ভালো ক্রিকেট খেলেছি। কিন্তু এখন যা হচ্ছে তা অপ্রত্যাশিত।
যুগান্তর: টেস্টে উন্নতির জন্য কী পরামর্শ দেবেন?
মোহাম্মদ রফিক: পরামর্শ একটাই, টেস্টে আমরা অনেক দুর্বল। ভালো করতে না পারলে আপনার কোনো দাম থাকবে না।
যুগান্তর: এতদিন খেলার পরও টেস্ট মর্যাদা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে..?
মোহাম্মদ রফিক: এই প্রশ্নটা আমাদের না করে যারা ম্যানেজমেন্টে আছেন তাদের করেন। তাহলে বেটার জবাব পাবেন। আপনিও খেলা দেখেন, আমিও দেখি। ক্রিকেট নিয়ে সারা বাংলাদেশের মানুষ কথা বলার চেয়ে ম্যানেজমেন্টে যারা আছেন তাদের কথাই সঠিক হবে। সুতারং এই প্রশ্নটা ম্যানেজমেন্টকে করলে ভালো জবাব পাবেন।
যুগান্তর: দীর্ঘদিন টেস্ট খেলার পরও বাংলাদেশের ইনিংস ব্যবধানে পরাজয় দেখে হতাশ হন?
মোহাম্মদ রফিক: যারা ম্যানেজমেন্টে আছে তারা কি চিন্তা করে সেটাই দেখার বিষয়। আপনি হতাশ হলে হবে? আপনি কিছু করতে পারবেন, না আমি কিছু করতে পারব? কিছুই করতে পারব না। আমরা শুধু আলোচনাই করতে পারি। হতাশা বা অস্থিরতা তারাই তৈরি করেছে, তাদেরই বন্ধ করতে হবে। তাদের সঙ্গে কথা বলতে হবে। তাদের প্রশ্ন করতে হবে কেন এমন হচ্ছে।
যুগান্তর: ১৯ বছরেও দেশে টেস্ট-সংস্কৃতি গড়ে না ওঠা নিয়ে যদি কিছু বলেন?
মোহাম্মদ রফিক: বিশ বছরে টেস্ট-সংস্কৃতি গড়ে ওঠেনি। তাহলে আর কবে হবে? আগেও এ নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। কোনো কাজ হয়নি। আমরা শুধু বলেই যেতে পারি কোনো কাজ হয়নি।

No comments:

Post a Comment