রাজকোট
শহর থেকে বেরিয়ে হাইওয়ে ধরে ১৩ কিলোমিটার দূরে সৌরাষ্ট্র ক্রিকেট
স্টেডিয়াম। আশেপাশে বসত বাড়ি খুব একটা নেই, অবারিত খোলা প্রান্তরের বুক
চিরে দাঁড়িয়ে লর্ডসের আদলে দৃষ্টিনন্দন এক ক্রিকেট স্থাপনা। ভেতরে ঢুকতেই
মন ভালো করার মতন সাজানো-গোছানো পরিপাটি পরিবেশের দেখা মিলবে। ক্রিকেটারদের
সুযোগ সুবিধা যেন এই মাঠে হাঁ করে দেখার মতো। অনুশীলনের জন্য একসঙ্গেই যে
আছে ২৮টি নেট!
রাজকোটের এই ভেন্যুতেই আগামী বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) ভারতের বিপক্ষে সিরিজ জেতার মিশনে নামবে বাংলাদেশ দল।
ভারতের মূল
শহরগুলোর তালিকা করলে সেখানে রাজকোটের স্থান পাওয়ার কোনো কারণ নেই। এমনকি
গুজরাট রাজ্যেরও মূল শহর নয় এটি। গুজরাটের আহমেদাবাদ, সুরাত, বারোদার পরে
চার নম্বরে আসে রাজকোটের নাম। ছোট্ট, ছিমছাম শহর। বাংলাদেশের যেকোনো মফস্বল
শহরের সঙ্গে এখানকার মিল খুঁজে পাওয়া সহজ। তবে দ্রুত বর্ধনশীল হওয়ায় এই
শহরে গড়ে উঠছে আধুনিক স্থাপনাও।
২০০৯ সালে
রাজকোটের শহরতলীতে বানানো হয় আধুনিক এই ক্রিকেট স্টেডিয়াম। ২০১৩ সালে
ভারত-ইংল্যান্ডের ওয়ানডে ম্যাচ দিয়ে এই মাঠে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেরও যাত্রা
শুরু হয়। তারপর থেকে আরও একটি ওয়ানডে, দুটো টি-টোয়েন্টি আর দুটো টেস্ট
হয়েছে এখানে। খেলে গেছে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা,
নিউজিল্যান্ডের মতো দল।
অর্থাৎ
চালুর পর ছয়টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ হয়েছে এখানে। সর্বশেষ টেস্ট হয়েছিল গেল
বছর অক্টোবরে। ২০১৫ সালের পর আর হয়নি ওয়ানডে। ২০১৭ সালে হয়েছে শেষ
টি-টোয়েন্টি। ভারতের প্রচুর নামকরা ভেন্যুর ভিড়ে সচরাচর ম্যাচ পাওয়া কঠিনই।
কিন্তু ঘরোয়া ক্রিকেট লেগেই থাকে। সৌরাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের
সাধারণ সম্পাদক হিমাংশু শাহ জানালেন, রঞ্জি ট্রফি, বয়সভিত্তিক ক্রিকেট,
মেয়েদের খেলা ইত্যাদি থাকায় বছরের ২০০ দিনই ব্যস্ত থাকে এই মাঠ।
ইংল্যান্ডের
বিখ্যাত লর্ডসের স্থাপত্যের অনুকরণে বানানো এই মাঠে একসঙ্গে খেলা দেখতে
পারেন ২৯ হাজার মানুষ। প্রেসবক্স অবিকল লর্ডসেরই মতো। তিন তলাবিশিষ্ট
গ্যালারিতেও আছে লর্ডসের ছাপ। কিন্তু সবচেয়ে যা নজর কেড়েছে তা হলো
ক্রিকেটারদের জন্য সুযোগ সুবিধা।
একসঙ্গে ২৮টি নেট, আছে আধুনিক সব ব্যবস্থা
বাংলাদেশের
বিভিন্ন ভেন্যুতে সুযোগ সুবিধা বাড়ানোর জন্য কয়েকদিন আগে আন্দোলন করেছেন
ক্রিকেটাররা। সেই ক্রিকেটাররা ভারতের একটি মফস্বল শহরে এসে সুবিধা দেখে
আফসোস বাড়িয়েছেন। সৌরাষ্ট্র ক্রিকেট স্টেডিয়ামের মূল করিডোরের মধ্যে
অনুশীলনের জন্যই একসঙ্গে তৈরি করা আছে ২৮টি নেট। শুধু তা-ই নয়, নেটগুলোর
উইকেটেও রাখা হয়েছে বৈচিত্র্য। কোনো উইকেটে আছে ঘাস, কোনোটা আবার ন্যাড়া।
পরিস্থিতি বুঝে একসঙ্গে ২৮ জন ব্যাটসম্যান ও বোলার নিজেকে প্রস্তুত করার
কসরত চালাতে পারেন এখানে।
বিরূপ আবহাওয়াতেও অনুশীলন চালিয়ে যেতে আছে অত্যাধুনিক ইনডোর সুবিধা। মূল মাঠে বানানো আছে ১২টি উইকেট। রয়েছে আধুনিক ড্রেনেজ সুবিধা।
পরিকল্পিত ব্যবস্থাপনায় নিয়মিত দেখভাল
বাংলাদেশের
মূল ভেন্যুগুলোও খেলা না থাকলে অবহেলায় অযত্নে পড়ে থাকে। খোদ হোম অব
ক্রিকেট মিরপুরের শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামের গ্যালারিরই বেহাল দশা।
চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে প্রতি বছর খেলা থাকলেও সেখানে
নেওয়া হয়না কোনো যত্ন। অবহেলায় বেহাল দশা ফতুল্লা, বগুড়া কিংবা খুলনা
স্টেডিয়ামেরও।
কিন্তু
রাজকোটের মতো ভারতের পেছনের সারির ভেন্যুর ব্যবস্থাপনা নিয়ে হিমাংশু যে
ধারণা দিলেন তা মুগ্ধ করার মতো। এখানে স্থায়ীভাবে নিয়োজিত আছেন ১৫০ জন
কর্মী। তারা সারাবছরই কাজ করেন। আন্তর্জাতিক খেলা থাকলে সে সংখ্যা বেড়ে যায়
আরও ৫০ জনে। মাঠের আশপাশ ও গ্যালারি পরিচ্ছন্ন করে রাখার দায়িত্ব দেওয়া
হয়েছে আবার ভিন্ন একটি এজেন্সিকে। তারাই নিয়মিতভাবে পরিচ্ছন্ন করার কাজ করে
থাকে।
স্থানীয় তারকাদের স্মরণ, বিদেশি দলগুলোর স্মৃতি স্মারক
গুজরাটেরই
সন্তান ভারতের বিখ্যাত ক্রিকেটার ভিনু মানকড়, ভারতের অভিষেক টেস্টের
খেলোয়াড় অমর সিং, লাধ রামজির স্মৃতি ধরে রাখা আছে এখানে। বর্তমানে ভারতের
টেস্ট দলের নিয়মিত মুখ চেতশ্বর পূজারাও রাজকোটেরই ছেলে। তাকেও রাখা হয়েছে
সম্মানের জায়গায়। এই পর্যন্ত রাজকোটে খেলে যাওয়া বিদেশি দলগুলোর স্মৃতিও
ধারণ করে রাখা আছে প্রেসিডেন্স বক্স, ভিআইপি গ্যালারি ও দর্শকদের প্রবেশের
অন্যান্য পথে।
No comments:
Post a Comment