আকরাম খান, মিনহাজুল আবেদীন নান্নু, আমিনুল ইসলাম বুলবুল , আতাহার আলী
খান, নাইমূর রহমান দূর্জয় , হাবিবুল বাসার প্রমূখদের ফাষ্ট জেনারেশন ,
মাশরাফী বিন মূর্তজা, সাকিব আল হাসান , মুশফিকুর রহিম প্রমুখদের সেকেন্ড
জেনারেশন এবং আজকের যারা বিশ্ব যুব ক্রিকেটে ফাইনালে পৌঁছে দিয়েছে- তঁরা
সকলেই ক্রিকেট বাংলাদেশের থার্ড জেনারেশন। ফাষ্ট জেনারেশনের হাতে খড়ি,
সেকেন্ড জেনারেশনের হাতে ব্যবধান কমিয়ে বিশ্ব ক্রিকেটকে জানান দেওয়া, থার্ড
জেনারেশনের হাতেই আজ বিশ্ব ক্রিকেটের চালিকার আসনে পৌঁছে দিতে সক্ষম
হয়েছে।
এখন প্রয়োজন বিশ্ব যুব ক্রিকেট জয় করা।
আজকে খেলায় প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত একবারের জন্যও মনে হয়নি বাংলাদেশ হারবে। প্রতিটি সেক্টরে ভাল করে জয় হাতে তুলে নিয়েছেন।
অভিনন্দন যুব ক্রিকেটারদের। ওদের যাত্রা শুভ হোক।
নূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে মাহমুদুল হাসান জয়ের অনবদ্য
সেঞ্চুরিতে নিউজিল্যান্ডকে বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছে বাংলাদেশ।
বৃহস্পতিবার পচেফস্ট্রমে নিউজিল্যান্ডের দেয়া ২১২ রানের টার্গেটে ব্যাট
করতে নেমে ৩৫ বল হাতে রেখেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় আকবর আলীর নেতৃত্বাধীন
বাংলাদেশের যুবারা।
মাহমুদুল হাসান জয় ১২৭ বলে ১০০ রান করেন। তার
ইনিংসটি ছিল ১৩টি চারে সাজানো। এছাড়া তাওহীদ হৃদয় ও শাহাদত হোসাইন দুজনই
ব্যক্তিগত ৪০ রানের দুটো ঝলমলে ইনিংস উপহার দিয়ে জয়ে ভূমিকা রাখেন। আগামী ৯
ফেব্রুয়ারি ভারতের বিপক্ষে ফাইনাল খেলবে বাংলাদেশ।
প্রথমে ব্যাট
করে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে ২১১ রান সংগ্রহ করে কিউই যুবারা। এ ম্যাচে
নিউজিল্যান্ডকে ৬ উইকেটে হারিয়ে ইতিহাস গড়ল বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল।
প্রথমবারের মতো যুব বিশ্বকাপের ফাইনালের টিকিট পেলেন তারা। এ নিয়ে
দ্বিতীয়বার সেমিতে খেলছেন লাল-সবুজ যুবারা। এর আগে ঘরের মাঠে ২০১৬ সালে
মেহেদী হাসান মিরাজের নেতৃত্বে প্রথমবার অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের শেষ চারে
খেলেন তারা।
এর আগে টস জিতে নিউজিল্যান্ডকে ব্যাটিংয়ে আমন্ত্রণ
জানান বাংলাদেশ অধিনায়ক আকবর আলি। তবে শুরুতেই ধাক্কা খায় তারা।
সূচনালগ্নেই রাইস মারিউকে ফিরিয়ে দেন শামীম হোসেন।ওয়ানডাউনে নেমে ফার্গাস
লেলম্যানকে নিয়ে প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করেন ওলি হোয়াইট। তবে
সেই যাত্রায় হোঁচট খান তিনিই। রাকিবুল হাসানের শিকার হয়ে ফেরেন তিনি।
পরে নিকোলাস লিডস্টোনকে নিয়ে খেলা ধরার চেষ্টা করেন লেলম্যান। কিন্তু তাতে
বাদ সাধেন শামীম। দলীয় ৫৯ রানে তাকে ফিরিয়ে দেন তিনি। ফলে চাপে পড়ে
নিউজিল্যান্ড। এ পরিস্থিতিতে ক্রিজে আসেন অধিনায়ক জেসে তাসকফ। তবে আস্থার
প্রতিদান দিতে পারেননি তিনি। হাসান মুরাদের বলির পাঁঠা হয়ে দ্রুত সাজঘরের
পথ ধরেন ক্যাপ্টেন।
মাঝপথে ইনিংস মজবুত করতে চেষ্টা করেন নিকোলাস
লিডস্টোন ও বেকহ্যাম হুইলার-গ্রিনাল। একপর্যায়ে দারুণ মেলবন্ধন গড়ে ওঠে
তাদের মধ্যে। ফলে লড়াকু সংগ্রহের পথে এগিয়ে যায় নিউজিল্যান্ড। কিন্তু হঠাৎ
পথ হারান লিডস্টোন। শরিফুল ইসলামের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন তিনি। ফেরার
আগে ৪৪ রানের সংগ্রামী ইনিংস খেলেন এ মিডলঅর্ডার। তাতে ভাঙে ৬৭ রানের জুটি।
পরক্ষণেই দ্রুত ফিরে যান কুইন সানডে। তাকে ফিনিশ করেন মুরাদ। সেই রেশ না
কাটতেই ক্রিশ্চিয়ান ক্লার্ককে বিদায় করেন শরিফুল। ফলে ফের বিপর্যয়ে পড়েন
কিউইরা। ধারাবাহিক বিরতিতে যাওয়া-আসার মিছিলে যোগ দেন জোয়েই ফিল্ড। তাকে
প্যাভিলিয়নের পথ ধরান শরিফুল।
তবে একপ্রান্ত আগলে রাখেন
হুইলার-গ্রিনাল। বিপর্যয়ের ওপর দাঁড়িয়ে ব্যাটে স্ট্রোকের ফুলঝুরি ছোটান
তিনি। তাতে লড়াইয়ের পুঁজি পায় নিউজিল্যান্ড। শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ৫০
ওভারে ৮ উইকেটে ২১১ রান করে তারা। গ্রিনাল খেলেন ৮৩ বলে ৫ চার ও ২ ছক্কায়
৭৫ রানের হার না মানা ইনিংস। বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট শিকার করেন
শরিফুল। ২টি করে উইকেট নেন মুরাদ-শামীম।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে
শুরুটা খুব বেশি ভালো করেনি বাংলাদেশ। দলীয় ২৩ রানে প্রথম উইকেট হারায়
লাল-সবুজের দল। ক্লার্কের বলে ফিরে যান তানজিদ হাসান। এরপর টিকেননি পারভেজ
হাসান ইমনও। ৩২ রানে সাজঘরে ফেরেন তিনি। এরপর তৌহিদকে নিয়ে হাল ধরেন
মাহমুদুল হাসান। দুজন মিলে দলকে নিয়ে যান একশ রানের ঘরে। তবে ঠিক ১০০ রানের
মাথায় আউট হন তৌহিদ। ফেরার আগে ৪৭ বলে ৪০ রান করেন তিনি।
এর পরও
দায়িত্বের সঙ্গে খেলে যান মাহমুদুল। ১২৬ বলে তুলে নেন সেঞ্চুরি। শতরান
স্পর্শ করার পরের বলে অবশ্য আউট হয়ে যান মাহমুদুল। ততক্ষণে দল পৌঁছে যায়
জয়ে কাছে। বাকি কাজ সারেন শাহাদাত। তার ব্যাটেই ৩৫ বল হাতে রেখে জয়ের
বন্দরে পৌঁছে যায় বাংলাদেশের যুবারা।
নিউজিল্যান্ড : ২১১/৮ (৫০
ওভার), [মারিও ১, হোয়াইট ১৮, লিলম্যান ২৪, লিডস্টোন ৪৪, টাসকফ ১০,
গ্রিননেইল ৭৫, কুইনিন ১, ক্লার্ক ৭, জো ফিল্ড ১২, অশোক ৫; শরিফুল
১০-২-৪৫-৩, শামীম ৬-১-৩১-২, রাকিবুল ১০-৩-৩৫-১, সাকিব ১০-১-৪৪-০, হাসান
১০-১-৩৪-২]
বাংলাদেশ : ২১৫/৪ (৪৪.১ ওভার), [পারভেজ ১৪, তানজিদ ৩,
মাহমুদুল ১০০, তৌহিদ ৪০, শাহাদাত ৪০, শামীম ৫; জো ৬-০-২৮-০, ক্লার্ক ৯-০-
৩৭-১, অশোক ১০-০-৪৪-১, টাসকফ ১০-০-৫৭-১, হ্যানকক ৭-০-৩১-১]
ফল : ৬ উইকেটে জয়ী বাংলাদেশ
আরও খবর পড়ুন
http://ranabhuiyan.com/