মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা -শুধুই কি একজন অধিনায়ক ছিলেন ? আজ আমরা এই প্রশ্নের উত্তরই খুঁজে দেখবো ।
মাশরাফী বিন মোর্ত্তজার তাঁর যোগ্য নেতৃত্বের গুণে একজন সফল অধিনায়ক হিসাবে ক্রিকেট বাংলাদেশকে পৌঁছে দিয়ে গিয়েছেন উচ্চতার শিখরে। এক সময় ক্রিকেট বাংলাদেশকে নিয়ে যারা নানা মন্তব্য ছুঁড়ে দিতে দ্বিধাবোধ করতেন না - আজ তারাই প্রশংসায় পঞ্চমুখ। কারন ক্রিকেট বাংলাদেশ যে কোন সময় কোন দলকে হারানোর সক্ষমতা অর্জন করেছেন।
তাই যখন কোন দেশের সাথে ক্রিকেট খেলা শুরু হয় প্রতিপক্ষ দল আতংকে থাকে কখন কি যেন করে ফেলেন বাংলাদেশের দামাল ছেলেরা। নতুন প্রজন্ম আরও বেশী শক্তিশালী; আরও বেশী পরিপক্কতা অর্জন করেছেন। সম্প্রতি সময়ে বিশ্বকাপ চাম্পিয়নই হওয়া তার প্রমান পাওয়া যায় । এসব সম্ভব হয়েছে - একজন মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা প্রেরনায়। মাশরাফী বিন মোর্ত্তজাকে শুধু একজন অধিনায়ক হিসাবে মূল্যায়ন করা হলে পূর্নতা পাবে না- তিনি ক্রিকেট বাংলাদেশের একজন প্রেরনা। তিনি শিখিয়েছেন কিভাবে নেতৃত্ব দিতে হয়; কিভাবে যুদ্ধ করে জিততে হয়; কিভাবে ইনজুরি মোকাবেলা করে সামনে এগিয়ে যেতে হয়। মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা আমাদেরকে জিততে শিখিয়েছেন। মাশরাফী বিন মোর্ত্তজার সবচেয়ে বড় গুন খুব ঠান্ডা মাথায় সবকিছু মোকাবেলা করে সামনের দিকে এগিয়ে চলার একটা প্রবনতা । ক্রিকেটে আমরা অনেককে ধৈর্যহারা হয়ে খারাপ আচারন করতে দেখেছি- কিন্তু একমাত্র মাশরাফী বিন মোর্ত্তজাকে কখনো ধৈর্যহারা হয়ে রাগতে দেখিনি।
ক্রিকেট বাংলাদেশকে সম্মানের শিখরে পৌঁছে দিয়ে একটি আদর্শ তৈরি করে দিয়েছেন- তাই আজ নতুন প্রজন্মের কাছে মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা একজন শুধু অধিনায়ক হিসাবেই নয় একজন আদর্শ অধিনায়ক তথা মহানায়ক হিসাবে তার পথ অনুসরন করবেন।
মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা ক্রিকেট বাংলাদেশের রেঁনেসা হিসাবে আর্বিভূত হয়েছেন- আগামী বছরগুলোতে এই রকম একজন মাশরাফী আসবেন কিনা - সময়ই তার মূল্যায়ন করবেন।
সকলকে আপন করে ফেলা মাশরাফী বিন মোর্ত্তজার আরও একটি বড় গুন । নিজ দলের ছাড়াও অন্য দলের খেলোয়ারদেরও আপন ভেবে চলাফেরা করতেন। এমনকি ভক্তদেরও তিনি আপন ভাবতেন সবসময়। তারই প্রমান পাওয়া যায় তার এক ভক্ত মাঠে ঢুকে পড়ে জড়িয়ে ধরেছিলেন। মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা তাকে নিরাপত্তা কর্মীরা যাহাতে কোন ব্যবস্থা না নেন সেইজন্য তাকে নিজে ধরে নিয়ে মাঠ থেকে বের করে দিয়েছিলেন । এমনি অনেক উদাহরন আমরা দেখতে পাই তার আচারনে তিনি কতটা ধৈর্যশীল ছিলেন।
এভাবে মাঠে ঢুকে পড়েছিলেন মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা ক্রিকেট ভক্ত।
মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা- ক্রিকেট অধিনায়ক হিসাবে
এক মহানায়কের প্রস্থানঃ
একজন ক্রিকেট অধিনায়ক হয়তো আসবেন আগামী দিনে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য- কিন্তু একজন লড়াকু, একজন প্রেরনা জোগানো, একজন জিততে শিখানো অধিনায়ক ; আদর দিয়ে সকলের কাছ থেকে কাংখিত খেলা আদায় করার কৌশল- আর মনে হয় একজনের পক্ষে এই সকল গুনাবলী অর্জন করা সম্ভবপর নাও হতে পারে। কাজেই এক ধরনের শুন্যতা তৈরি হবে ক্রিকেট বাংলাদেশে। তাই মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা অধিনায়ক হিসাবে বিদায় মানি এক ক্রিকেট মহানায়কের বিদায় হিসাবে দেখছেন ক্রিকেট ভক্তরা।
মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা ক্রিকেট অধিনায়ক হিসাবে ক্যারিয়ারঃ
মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা ক্রিকেটের তিন ফরমেটে ১১৬ ম্যাচে অধিনায়ক হিসাবে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন । ৬০টি ম্যাচে জয় লাভ করেছেন এবং ৫৩টি ম্যাচে হেরেছেন অধিনায়ক হিসাবে । অধিনায়ক হিসাবে সাফল্যের গড় ৫৬.৩২%। একজন অধিনায়ক হিসাবে ১০০টি উইকেট অর্জন করা বিশ্ব ক্রিকেটে আর মাত্র ৪ জনের রয়েছেন। মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা এখনো ফর্মে রয়েছেন। তিনি আরো কিছুদিন ক্রিকেট খেলবেন- এমনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। ফর্মে থাকা অবস্থায় এইভাবে অধিনায়ক হতে সম্মান নিয়ে বিদায় লওয়া খুব কম অধিনায়কের কৃতৃত্ব রয়েছে। বিশ্ব ক্রিকেটের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই- বেশীর ভাগ অধিনায়কের মাঠ থেকে বিদায় লওয়ার ভাগ্য হয় না। ফর্ম খারাপ হওয়ার সাথে সাথে তার অধিনায়কত্ব কেড়ে লওয়া হয়। সাধারনত টেবিলে বসে বসে অধিনায়কত্ব রদবদল করে থাকেন প্রত্যেক দেশের বোর্ডের হর্তাকর্তাগণ। কাজেই মাঠ থেকে বিদায লওয়ার সময়ও তাদের ভাগ্যে জুটে না। ভারত পাকিস্থানের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই কিভাবে তাঁরা বিদায় নিয়েছেন । একমাত্র মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা ব্যতিক্রম - শুধুমাত্র তাঁর নেতৃত্বের গুণে এবং ক্রিকেট বাংলাদেশকে যে স্থানে পৌঁছে দিয়ে গিয়েছেন- তাঁর সতীর্থরা তাঁকে সেইভাবে বিদায় দিয়েছেন - শুধু আনুষ্ঠানিকতা দিয়ে নয়- যার যার প্রারফমেন্স দিয়ে ; খেলার মাধ্যমে এবং বিদায় বেলায় বেশ কয়েকটি রেকর্ড করে করে ।
ক্রিকেট বাংলাদেশে একজন কিংবদন্তী হয়ে থাকবেন ; যাকে সবাই ক্রিকেটের মহানায়ক বলে সম্ভোধন করবেন , তিনি সবার প্রিয় মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা । একজন সফল অধিনায়ক হিসাবে ক্রিকেটের সকল ফরমেট এ সমানভাবে নেতৃত্ব দিয়ে সফলতার স্বাক্ষর রেখে বিদায় নিয়েছেন।
সতীর্থরা যেভাবে বিদায় দিলেন তাঁদের প্রিয় অধিনায়ককেঃ
মাশরাফী বিন মোর্ত্তজাকে যেভাবে খেলার মাধ্যমে এবং আনু্ষ্ঠানিকতার মাধ্যমে বিদায় দিয়েছেন তা চির স্মরনীয় হয়ে থাকবে। ক্রিকেট মাঠে মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা পদচারণা সকলকে সামনে এগিয়ে নিতে সাহায্য করেছেন- সর্তীথরা সকলেই একবাক্যে স্বীকার করছেন।
বাংলাদেশের জয়টা ছিল সময়ের ব্যাপার। মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিনের ইয়ার্কারে চার্লটন শুমারের স্টাম্প উপড়ে গেল। ম্যাচ শেষ। তখন কাভারে দাঁড়িয়ে মাশরাফি বিন মুর্তজা। সতীর্থরা এগিয়ে এলেন,জড়িয়ে ধরলেন তাদের প্রিয় বড় ভাই, প্রিয় নেতাকে। বাংলাদেশ ক্রিকেটকে যিনি এতদিন কাঁধে তুলে এগিয়ে নিয়েছেন; এবার তাকে কাঁধে তুলে নিলেন তামিম-মাহমুদুল্লাহরা। তামিমের কাঁধে চড়ে গ্যালারির দর্শকদের উদ্দেশে হাত নাড়ছিলেন মাশরাফি। এরপর মাশরাফিকে বাউন্ডারি লাইনের ঠিক বাইরে কাঁধ থেকে নামানো হয়।
অধিনায়ককে বাইরে রেখে ড্রেসিংরুমে চলে যায় দল। সেখানে নিজেদের জার্সি পাল্টে সব খেলোয়াড় গায়ে চাপালেন বিশেষ জার্সি। যার সামনে লেখা ‘থ্যাঙ্ক ইউ ক্যাপ্টেন’, পেছনে মাশরাফির নাম ও নম্বর।
মাশরাফির ২ নম্বর জার্সিটি ট্রেডমার্ক হয়ে আছে বাংলাদেশের ক্রিকেটে। সেটাই বোঝাতেই এক মুহূর্তের জন্য বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা হয়ে গেলেন ‘মাশরাফি’।
সতীর্থদের এমন আয়োজনে চমকে গিয়েছিলেন মাশরাফি। তিনি বলেন, ‘অনেক বড় সম্মানের। আমি জানতাম না ওরা এরকম চমক রেখেছে আমার জন্য। তবে মাঠেই সম্ভবত বড় উপহারটা পেয়েছি (দলের জয়)। ক্রিকেট বোর্ডকে ধন্যবাদ। আমার ছেলেদের ধন্যবাদ। সবাই ছিল দারুণ।’
নেতৃত্বের শেষ ম্যাচে সাকিবকে মিস করেছেন মাশরাফিঃ
প্রায় দেড় যুগ একসঙ্গে খেলেছেন দু’জন। নেতৃত্ব ছাড়ার ম্যাচে মাশরাফি পেলেন
না সাকিবকে। সবার মাঝে সাকিবকে মিস করেছেন দেশের সফলতম অধিনায়ক।
জুয়াড়ির প্রস্তাব গোপন করায় সাকিব আল হাসানকে একবছরের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে আইসিসি। এই সময়ে ক্রিকেটের কোনো ধরনের কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবেন না সাকিব। এমনকি স্টেডিয়ামে আসার ব্যাপারেও রয়েছে বিধিনিষেধ। তা না হলে হয়তো অধিনায়ক মাশরাফির শেষ ম্যাচে ম্যাঠেই থাকতেন সকিব।
শুক্রবার সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শেষ ওয়ানডেতে জিম্বাবুয়েকে ১২৩ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। সুবাদে অধিনায়ক হিসেবে ওয়ানডেতে ৫০তম জয়ের স্বাদও পেয়েছেন মাশরাফি। ম্যাচ শেষে মাশরাফি জানিয়েছেন, বাংলাদেশের অধিনায়ক হিসেবে স্মরণীয় পথচলায় ভূমিকা রাখায় ধন্যবাদ প্রাপ্য তার সব সতীর্থের।
জুয়াড়ির প্রস্তাব গোপন করায় সাকিব আল হাসানকে একবছরের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে আইসিসি। এই সময়ে ক্রিকেটের কোনো ধরনের কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবেন না সাকিব। এমনকি স্টেডিয়ামে আসার ব্যাপারেও রয়েছে বিধিনিষেধ। তা না হলে হয়তো অধিনায়ক মাশরাফির শেষ ম্যাচে ম্যাঠেই থাকতেন সকিব।
শুক্রবার সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শেষ ওয়ানডেতে জিম্বাবুয়েকে ১২৩ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। সুবাদে অধিনায়ক হিসেবে ওয়ানডেতে ৫০তম জয়ের স্বাদও পেয়েছেন মাশরাফি। ম্যাচ শেষে মাশরাফি জানিয়েছেন, বাংলাদেশের অধিনায়ক হিসেবে স্মরণীয় পথচলায় ভূমিকা রাখায় ধন্যবাদ প্রাপ্য তার সব সতীর্থের।
আলাদা করে তিনি বলেছেন সাকিবের কথা, ‘এটা অনেক বড় সম্মানের। ছেলেরা অসাধারণ
খেলেছে। তারা দলের জন্য সবকিছু উজাড় করে দিয়েছে। আমি দলের সব ছেলেকে
ধন্যবাদ জানাতে চাই। বিশেষ করে সাকিবকে। সে যদি এখানে থাকত, তাহলে বিষয়টা
অন্যরকম হতো। সবাইকে ধন্যবাদ।’
অধিনায়ক মাশরাফির শেষ ম্যাচের আগের দিন রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়েছেন সাকিব। সেখানে মাশরাফিকে ‘সত্যিকারের নেতা’ আখ্যায়িত করে ‘প্রিয় ভাই’ হিসেবে সব সময় পাশে চেয়েছেন সাকিব।
অধিনায়ক মাশরাফির শেষ ম্যাচের আগের দিন রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়েছেন সাকিব। সেখানে মাশরাফিকে ‘সত্যিকারের নেতা’ আখ্যায়িত করে ‘প্রিয় ভাই’ হিসেবে সব সময় পাশে চেয়েছেন সাকিব।
লিটন আর বিরাট কোহলির ব্যাটিং সবচেয়ে বেশি মুগ্ধ করে মাশরাফিকেঃ
২০১৫ সালে মাশরাফি বিন মুর্তজার নেতৃত্বে ওয়ানডে অভিষেক লিটন দাসের। অধিনায়ক মাশরাফির শেষ ম্যাচে খেললেন ১৭৬ রানের দৃষ্টিনন্দন ইনিংস। লিটনের নান্দনিক ব্যাটিংয়ের মাধুর্য সব সময় নজর কাড়ে ভক্ত-সমর্থকদের। মাশরাফিও লিটনের ভক্তদের মধ্যে অন্যতম।
ম্যাচ শেষে লিটনকে সঙ্গে করে সংবাদ সম্মেলনে এলেন মাশরাফি। প্রশংসায় ভাসালেন টাইগার ওপেনারকে। মাশরাফি বলেন, ‘আমার দুজন ব্যাটসম্যানের ব্যাটিং দেখতে সবসময় ভালো লাগে একটা হচ্ছে বিরাট কোহলি আরেকটা হচ্ছে লিটন। সবসময় বলি, অনেকেই ভালো প্লেয়ার আছে। কিন্তু যতক্ষণ উইকেটে থাকে দেখতে ভালো লাগে, আমি লিটনকে এটা অনেক আগে থেকেই বলে আসছি।'
‘আমি সব সময় বিশ্বাস করি লিটন শুধু উইকেটে থেকে খেলা সেটা না, লিটন মোমেন্টাম বদলে দিতে পারে।
নিজের জন্য কখনোই খেলেনিঃ
বাংলাদেশের
অধিনায়ক হিসেবে ছেলে মাশরাফি বিন মুর্তজার শেষ ম্যাচ দেখতে গতকাল সকালেই
নড়াইল থেকে সিলেটে উড়ে গেছেন গোলাম মুর্তজা স্বপন। ছোটো ভাই মোরসালিন
মুর্তজা ও নড়াইল থেকে মাশরাফির বন্ধুরাও হাজির হয়েছিলেন সিলেটের
গ্যালারিতে। নড়াইল শহরের মহিষাখোলার ডুপ্লেক্স বাড়িতে বসে টিভি স্ক্রিনে
চোখ রাখছিলেন হামিদা মুর্তজা। মাশরাফির স্ত্রী, ছেলে-মেয়েও ঢাকার বাসায়
ছিল। তারাও সিলেটমুখী হয়নি।
গতকাল
বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ থাকার সময়টাতে মুঠোফোনে পাওয়া গেল হামিদা মুর্তজাকে।
ফোনের ওপ্রান্তে কণ্ঠটা একটুও ভারী মনে হয়নি। কোনো ধরনের আড়ষ্টতাও ধরা
পড়েনি। বরং প্রকৃতির নিয়মের মতোই অধিনায়ক হিসেবে ছেলের বিদায়কে বরণ করলেন
তিনি।
গত ৫ মার্চ
সংবাদ সম্মেলনে মাশরাফি বলেছিলেন, ঘুম থেকে উঠেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এবং
দুপুরে জানিয়ে দিয়েছেন। এমনকি আগের দিনও পরিবারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা
করেননি। গতকাল হামিদা মুর্তজার কথায়ও যার সত্যতা পাওয়া গেল।
মাশরাফির মা
বলছিলেন, ‘সে ঘুম থেকে উঠেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, সে অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেবে।
প্রত্যেক দিনই আমাকে বলে যায় যে, আম্মা আমি মাঠে যাচ্ছি। আমার জন্য দোয়া
করো। কালকেও (৫ মার্চ) সে একই নিয়মে বলছে যে আম্মা আমি অধিনায়কত্ব থেকে
অবসর নেব। আমি মাঠে গিয়ে সংবাদ সম্মেলনে আজকে আমি বলে দেব। তুমি দোয়া করো।
এটুকুই আমার সঙ্গে কথা হয়েছে। তাছাড়া আর কোনো কথা হয়নি। এবং আমাকে, ওর
আব্বাকে, ওর মামাকে, ওর বন্ধু-বান্ধব সবাইকেই বলছে যখন এই সিদ্ধান্ত ও নিছে
যে, অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেবে। সবাইকে বলছে।’
তৃতীয় দফায়
টানা ছয় বছর বাংলাদেশের অধিনায়কের দায়িত্বে ছিলেন মাশরাফি। গত এক বছর ধরে
ধেয়ে আসা আলোচনার ঝড় থামিয়ে নেতৃত্ব ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন। ছেলের
ক্যারিয়ারের শেষের শুরু দেখে হামিদা মুর্তজার ভেতরটা ঠিকই কেঁপেছে। যা
প্রকাশেও রাগঢাক করেননি। গতকাল বলেছেন, ‘বুঝেন তো দীর্ঘ ছয়টা বছর
অধিনায়কত্ব করছে। এখন অবসর নিল। একটু খারাপ তো লাগেই। এটা তো বুঝেনই। এটা
তো বলার অপেক্ষা রাখে না। সবারই বোঝা উচিত। এখন খারাপ লাগলে তো সবকিছু চলবে
না। এটাকে তো মেনে নিতেই হবে।’
তবে নিজের
ভেতরকে আড়াল করে মায়ের গভীর মমতার চাদরে ঠাঁই দিচ্ছেন ছেলের সিদ্ধান্তকে।
মাশরাফির নেতৃত্ব ছাড়ার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে হামিদা মুর্তজা বলেছেন,
‘কেন স্বাগত জানাব না? নতুন অধিনায়ক আসুক। ২০২৩ সালে বিশ্বকাপ, নতুন
অধিনায়কের হাত ধরে খেলবে বাংলাদেশ। ওরটা তো ছাড়তেই হবে, আজকে হোক, কালকে
হোক ছাড়তেই হবে। আগেই ছেড়ে দিল। সম্মানের সঙ্গে ছাড়াটাই সবচেয়ে উত্তম।
নিজের সম্মান নিয়ে সরে দাঁড়ানোটাই সবথেকে উত্তম। সেটাই করছে।’
মাশরাফির
নেতৃত্বের পরশ পাথর বদলে দিয়েছে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে। ২০১৪ সালে ধুঁকতে
থাকা বাংলাদেশকে টেনে তুলেছেন তিনি। দিন বদলের নেতা বলা হয় তাকে। দেশের
সর্বকালের সেরা অধিনায়কের তকমাও তার নামের পাশে শোভা পাচ্ছে। লাল-সবুজ
জার্সিতে ছেলের অর্জন মায়ের মনকে গর্বের আনন্দে ভরিয়ে তোলে। হামিদা মুর্তজা
বলছিলেন, ‘আসলে এটা তো আপনারাও জানেন, ও ক্রিকেটকে কি দিছে, না দিছে।
নিজের জন্য কখনোই খেলেনি। সবসময় দেশের জন্য খেলছে। আর ক্রিকেটকে কতদূর
এগিয়ে এনেছে, এটা তো সারা বাংলাদেশের মানুষই জানে। যখন মানুষের মুখে ওর কথা
শুনি, তখন অবশ্যই গর্ব হয়। মা হিসেবে মাথাটা উঁচু হয়ে যায়।’
অধিনায়ক
হিসেবে শেষ ম্যাচ খেলে ফেলেছেন মাশরাফি। তবে বোলার হিসেবে এখনও ২২ গজের
চ্যালেঞ্জ নিতে মুখিয়ে আছেন। মমতাময়ী মায়ের মন বলে, ছেলে আরো খেলুক। যতদিন
তার সময় ও শরীর বিদ্রোহ না করছে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ারে যতিচিহ্ন
এঁকে দেয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্তটা মাশরাফির জন্যই তুলে রাখতে বললেন হামিদা
মুর্তজা।
একটি অধ্যায়ের সমাপ্তিঃ
সন্ধ্যায়
সিলেটের আকাশ ভেঙে শুরু হলো বৃষ্টি। কানায় কানায় পূর্ণ গ্যালারির দর্শকরা ছুটতে শুরু করলেন এদিক ওদিক। আবার কেউ কেউ উপভোগ করলেন জলের ছোঁয়া। তবে এক মুহূর্তও থামেনি
‘মাশরাফি’, ‘মাশরাফি’ ‘বাংলাদেশ’ ‘বাংলাদেশ’ চিৎকারের ধ্বনি। সকাল থেকেই এই চিত্র সিলেটের
লাক্কাতুরা চা বাগান ঘেঁষে
দাঁড়িয়ে থাকা সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। দুপুর ২টায় খেলা শুরু। কিন্তু ১০টা থেকেই মাশরাফি বিন মুর্তজার নাম ধরে স্লোগান দিয়ে মাঠে আসতে শুরু করেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। সেই ভিড় ঠেকাতে নেয়া হয় বাড়তি নিরাপত্তাও।
তবে দেশের সেরা অধিনায়কের প্রতি ভালোবাসার জোয়ার আটকানো বেশ কঠিন হয়। যারা টিকিট পাননি তারা ভিজেই অপেক্ষা করেছেন বাইরে। কারণ তাদের প্রিয় মাশরাফি এই ম্যাচেই ইতি টানছেন অধিনায়কত্ব অধ্যায়ের। এ কারণেই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ ও সিলেট অনেকটা জায়গা করে নিবে টাইগারদের ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসেও। অধিনায়ক হিসেবে শেষ টস করলেন তিনি। যদিও তিনি এখনো অবসর নেননি। তবে তাকে আন্তর্জাতিক ওয়ানডেতে দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই ক্ষীণ। রাজনীতিতে আসার পর তাকে নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা তুঙ্গে। তবে তার শেষটা ক্রিকেটপ্রেমীরা আরো একবার রাঙিয়ে দিয়েছেন অকৃত্রিম ভালোবাসায়। সিলেটে বাংলাদেশ ক্রিকেটে তার নেতৃত্ব অধ্যায়ের ইতি হলো ভালোবাসার বৃষ্টিতে সিক্ত হয়েই। Rana Bhuiyan
email: mhsebus64@gmail.com
http://ranabhuiyan.com/
সূত্রঃ ইত্তেফাক, মানব জমিন,